লাভ কিংবা হৃদয় আকৃতিকে আমরা সাধারণভাবে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেই জানি। ভালোবাসার জন্য কেউ রক্ত ঝরিয়েছেন।তো কেউ আবার তাজমহল বানিয়ে সেই ভালোবাসাকে বুকের মধ্যে ধরে রেখেছেন।
বিশ্বের এই এক জায়গায় ধু ধু মরুভূমির মাঝে হৃদয় আকৃতির দুটি বইতে থাকা হ্রদ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে তাদের সৃষ্টিতে।সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাইয়ে ধু-ধু মরুভূমির মাঝে এই লাভ লেক বয়ে চলেছে। জোড়া হৃদয় এর প্রতীক নিয়ে শান্ত ও নিটোল হৃদটি মরুভূমির বুকে ভালোবাসার নয়া মরুদ্যান। তাকে ডাকা হয়ে ‘লাভ লেক’ নামে।
কিছু বছর আগেও লাভ লেক এর তেমন পরিচিতি ছিল না। দুবাইয়ের রাজকুমার শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ। তিনি ইনস্টাগ্রামে কৃত্রিম এই হ্রদের ছবি শেয়ার করেছিলেন। এখন সেখানে পর্যটকদের ভিড়। ভালোবাসা-কাতর হৃদয়ের দুই দন্ড শান্তির নীড়। ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করার পরই লাভ লেক আলোচনায় আসে, বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। সবাই অবাক হয়।
লেকের প্রবেশপথে হৃদয় আকৃতির আইকন নিয়ে সুস্থির, অচঞ্চল লাভ লেক। যেন বলছে, চুপ করে থাকো, ভালোবাসা নীরব, সে কোলহল করে না। ভালোবাসায় উন্মথিত আবেগ থাকতে পারে, তারপরও তা শান্ত ও সমাহিত। নিসর্গ আর নীরব প্রেমের যুগলবন্দী এই লাভ লেক। মরুভূমির মধ্যে মরীচিকা মনে হতে পারে। আসলে তা নয়। মরীচিকা নয়, মনকে প্রসন্ন ও প্রশান্ত করে এই লাভ লেক। তার নির্মাণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সৌন্দর্য অবাক করে।
স্থানের নাম আল কুদ্রা। এখানেই পাঁচ লাখ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে লাভ লেক বিস্তৃত। আয়তন কম নয়। আবেগের আয়তন হয়তো তার চেয়ে বেশি। তবুও এই বিশাল আয়তনের হ্রদে উষ্ণ আবেগ ভিজিয়ে নিচ্ছেন অসংখ্য পর্যটক। গাছপালায় ঘেরা এক জোড়া হ্রদ। পানিতে পা ভেজানোর অনুমতি আছে। ১৬ হাজারের বেশি গাছপালা লাভ লেক ঘিরে আছে। ১৭৫ প্রজাতির পাখির কলরব হৃদয়কে আকুল করতে বাধ্য।
লেকের পানিতে খেলছে গোল্ড ফিশ। মন অজান্তেই ফিসফিস করে ওঠে – কী কথা বলতে চায় সে! জোড়া লাভ লেক এখন বিশ্বের অন্যতম রোমান্টিক পার্ক। মনের তারে স্পার্ক করে। সরস স্ফূলিঙ্গ! পার্কে প্রবেশে কোনো অর্থ খরচ নেই। ড্রোন এর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে। করোনাকালের বৈরী পরিবেশে লাভ লেক বা রোমান্টিক পার্কের খোঁজ পর্যটকদের মনে আগ্রহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। পর্যায়ক্রমে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়।
মৃদু বাতাস, গাছপালার সরসর আওয়াজ, শান্ত লেকের পানিতে, পাখির কূজন মনকে আরেক জগতে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। মরুভূমির উত্তপ্ত প্রতিবেশ এখন মিথ বা রূপকথা। বদলে গেছে সব। বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। এই লাভ লেক অন্য রূপকথার কথা বলে। প্রকৃতি ও প্রেম এখানে হাতে হাত রেখে পাশাপাশি চলে।
ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন সম্পর্কসূত্রের এই করুণ কালে মনে তাপদাহ। প্রেম-প্রকৃতিবিহীন বালুচর! প্রযুক্তি ও প্রকৃতিকে যোগ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত নির্মাণ করেছে যুগল লাভ লেক। সদ্য-পরিচিত এই লাভ লেক নিসর্গ ও ভালোবাসার যোগসাজসে গড়া এক নতুন মরুদ্যান।
আপনার মতামত লিখুন :